submarin 20
ডুবোজাহাজ আই – ৫২ ধ্বংসের রহস্য
পুরনো সময়ের কোন একটা রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে প্রায়ই নতুন সব রহস্যের সৃষ্টি হয়ে থাকে. এই রকমই হয়েছে, অংশতঃ, সেই ইতিহাস নিয়ে, যা আমরা আজ বর্ণনা করতে যাচ্ছি. তাতে রয়েছে সোনার ভাণ্ডার, জাপানের তত্কালীন সর্বাধুনিক ডুবোজাহাজ ও হিরোশিমার বোমা বর্ষণের রহস্য.
১৯৯৫ সালে বিখ্যাত আমেরিকার গুপ্তধনের সন্ধানী পল টিডওয়েল রাশিয়ার একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জাহাজ ভাড়ায় নিয়েছিলেন, যাতে ছিল খুবই বিরল এক রাডার, যা দিয়ে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের খোঁজ করা সম্ভব হয়. তার সহায়তা নিয়ে আমেরিকার এই ব্যক্তি আশা করেছিলেন অতলান্তিক সমুদ্রের জলের নীচে জাপানের ডুবোজাহাজ আই – ৫২ খুঁজে বের করার, যা ১৯৪৪ সালে এক অজানা পরিস্থিতিতে ধ্বংস হয়েছিল. কিন্তু টিডওয়েল এই জাহাজেরই শুধু খোঁজ করছিলেন না, তিনি আসলে খোঁজ করছিলেন সেই জাহাজের মালপত্রের।
মহাফেজখানার দলিল পত্রের মধ্যে খুঁজতে গিয়ে টিডওয়েল নিজের জন্য বুঝতে পেরেছিলেন যে, মাল পরিবহনের জন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত ডুবোজাহাজ আই – ৫২, ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মকালের শুরুতে গোপনে জাপান ছেড়ে চলে গিয়েছিল. এই জাহাজে করে জার্মানীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুই টন সোনা ও কিছু জাপানী অসামরিক বিশেষজ্ঞকে. সিঙ্গাপুরে এই জাহাজে বোঝাই করা হয়েছিল আরও ২২৮ টন সীসা, মলিবডেনাম ও উলফ্রাম ধাতু, আর তারই সঙ্গে ৬০ টন কাঁচা রবার. সবুজ অন্তরীপের কাছে আই – ৫২ জলে ভেসে উঠেছিল ও নিজের অবস্থানের দিক নির্দেশ বেতার তরঙ্গে পাঠিয়েছিল, যাতে জার্মানীর ডুবোজাহাজ ভি – ৩৫০ এটাকে খুঁজে পায় ও নিজেদের জাহাজে এই সব মালপত্র ও সোনা নিয়ে নিতে পারে. জাপানের লোকরা নিজেদের এখানে নিরাপদ মনে করেছিল, কারণ তারা জানতো না যে, আমেরিকা ও ব্রিটেনের লোকরা বহুদিন আগেই জাপানী সাঙ্কেতিক বার্তার অর্থ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে এই ডুবোজাহাজ দুটির দেখা হওয়ার জায়গায় এই জায়গার পাহারায় রত বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ ভোগ কে বোমারু বিমান পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল. ডুবোজাহাজের নাবিকদের জন্য এই বিমানের আচমকা আবির্ভাব একেবারেই চমকানো ব্যাপার ছিল, কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তারা জাহাজের সমস্ত ঢাকনা বন্ধ করে জলের তলায় ডুবে যেতে সক্ষম হয়েছিল. বিমানের চালক লেফটেন্যান্ট জেরি টেলর বাধ্য হয়েছিলেন জলে ভাসা শব্দ মাধ্যমে খোঁজার উপযুক্ত বয়া থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুযায়ী বোমা ফেলতে. বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আমেরিকার পাইলটের দুটোর কোন একটা জাহাজও ডুবিয়ে দেওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না. আর তার আক্রমণ সফল হয়েছে কি না, তা অন্তত জাহাজের ভেসে ওঠা টুকরো দেখেও টের পাওয়ার উপায় টেলরের ছিল না, কারণ তার শেষ বোমা বর্ষণ, সে করেছিল একেবারে চরম অন্ধকারেই. পরের দিন সে জাহাজ ধ্বংসের চিহ্ন খুঁজতে এই এলাকায় উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের দেখতে পেয়েছিল আক্রমণের জায়গা থেকে অনেক দূরে. তখন এই ব্যাপারটার উপরে মনোযোগ দেওয়া হয় নি. পরে জানা গিয়েছিল যে, আই – ৫২ তার যাত্রা থেকে আর ফিরে আসে নি।
সম্ভবতঃ হঠাত্ করেই আমেরিকার বিমানের জার্মান ও জাপানী ডুবোজাহাজের দেখা হওয়ার জায়গায় উপস্থিত হওয়া, পরে গবেষকদের ধারণা করতে বাধ্য করেছিল যে, দুই দলই জাপানের জাহাজ থেকে জার্মান জাহাজে মাল সরাতে পারে নি. এর মানে হল যে, দুই টন সোনা খোঁজার দরকার রয়েছে জাপানের ডুবে যাওয়া আই – ৫২ জাহাজের খোলের মধ্যেই. ঠিক সেটাই করতে চেয়েছিলেন পল টিডওয়েল, রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণার জাহাজ ভাড়া করে.কিন্তু তিনি কিছুই খুঁজে পান নি।
কিন্তু তাঁর অভিযান গুটিয়ে ফেলার বদলে, টিডওয়েল অন্য জায়গায় খোঁজ শুরু করেছিলেন. এর পরে তিনি নির্ভর করেছিলেন আমেরিকার যুদ্ধ বিজয়ের সামগ্রীর মহাফেজখানায় জার্মান ভি - ৩৫০ ডুবোজাহাজের ক্যাপ্টেন যে রিপোর্ট লিখেছিল, তার উপরে, যেখানে জাপানের আই – ৫২ ডুবে যাওয়ার দিক নির্দেশ দেওয়া ছিল অন্য. এর পরেই রুশ জাহাজের রাডার যন্ত্রে ধরা পড়েছিল সিগার আকৃতির ডুবে যাওয়া সাবমেরিনের চেহারা, যা মহা সমুদ্রের তলায় পড়েছিল. জলে টেলিভিশন ক্যামেরা সমেত যন্ত্র নামিয়ে দেখা হয়েছিল ও তাতে স্পষ্ট করেই দেখা গিয়েছিল যে, এই ডুবোজাহাজের খোল বোমার আঘাতে ফুটো হয়েছে, তাতে কিছু ভাঙা অংশ ও কিছু জাপানী সামরিক নৌবাহিনীর প্রতীক রয়েছে. এটা যে, জাপানের আই – ৫২ যুদ্ধ জাহাজ, সেই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ ছিল না. টিডওয়েল ও রুশ জাহাজের নাবিকদের আনন্দের সীমা ছিল না! কিন্তু রাশিয়ার এই অভিযানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্য অনুযায়ী তখন মহা সমুদ্রের নীচ থেকে কোন রকমের সোনা বা অন্য কোনও মালপত্র তোলা হয় নি – কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাতিই ছিল না. টিডওয়েল ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখনের মতো ঘোষণা করে যে, এক বছর বাদে নতুন অভিযান করে সোনা উদ্ধারের কাজ করবেন।
কিন্তু টিডওয়েল এই সোনা উদ্ধার করেছেন অথবা তা করার চেষ্টা করেছেন, তা সংবাদ মাধ্যমে কখনই দেখা যায় নি. আর রাশিয়ার সেই অভিযানে যাওয়া বিখ্যাত ভূতাত্ত্বিক গিওর্গি স্ত্রেঝেনক পরে ঘোষণা করেছিলেন যে, কোন রকমের সোনাই জাপানের এই ডুবোজাহাজে টিডওয়েল খুঁজে পান নি, তা কোথায় গেল – তা বোঝা যাচ্ছে না।
তারই মধ্যে জার্মানীর ডুবোজাহাজ ভি – ৩৫০ এর ক্যাপ্টেন তাঁর নিজের রিপোর্টে স্পষ্ট করেই জার্মান ভাষাতে লিখেছিলেন যে, আই – ৫২ জাহাজের সমস্ত মালপত্র জার্মানীর সাবমেরিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল. সবটাই, এমনকি সোনা সমেত. যদি তা আদতে থেকে থাকে।
আই – ৫২ জাহাজে বোমার আঘাতের গর্ত ও বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ধাতব অংশ প্রমাণ করে যে, এই জাহাজকে জলের নীচের কোন ডুবো বোমার আঘাতে ক্ষতি গ্রস্ত হতে হয় নি অথবা কোন টর্পেডো ফেটে তা হয় নি. তা হয়েছে জাহাজের মধ্যেই থাকা কোন বোমার আঘাতে. যদি ধরে নিতে হয় যে, এটা খাবার দাবার সমেত কোন একটা বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বোমা ফেটে হয়েছে, যা জার্মানীর জাহাজ থেকে এখানে তোলা হয়েছিল, তবে জার্মানীর সেই ক্যাপ্টেন আগে থেকে জানতে বাধ্য ছিল যে, কখন এই বোমার ঘড়ির কাঁটা বিস্ফোরণ ঘটাবে. আর তাই যথেষ্ট ঠিক করেই আই – ৫২ জাহাজের দিক নির্দেশ করতে সমর্থ হয়েছিল. এখন প্রশ্ন হল: কেন জার্মানদের নিজেদের সহকর্মী দেশের ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে হয়েছিল? তারা কি লুকোতে চেয়েছিল?
একটা ধারণা রয়েছে যে, জাপানের জাহাজে করে জার্মানদের জন্য সোনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না, ছিল তার থেকেও মূল্যবান অন্য কিছু. যা জার্মানীকে রক্ষা করতে পারত, যখন তারা নিজেদের দেশের পূর্ব দিকে সোভিয়েত সেনা বাহিনীর কাছে সরাসরি যুদ্ধে ক্রমাগত হেরেই যাচ্ছিল আর পশ্চিম দিক থেকে তাদের তাড়িয়ে ঢুকে আসছিল অ্যাংলো- আমেরিকার জোটের সেনা. এটা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হতে পারত. এই ধারণা বর্তমানে জনপ্রিয় হয়েছে রুশ ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধ ““উদয়ের সূর্য” অপারেশন অথবা আই – ৫২ সাবমেরিন নিয়ে একশ একটি রহস্য”. এই প্রবন্ধের লেখকের মতে, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক, হিরোশিমার এক গোপন ল্যাবরেটরীতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়েছিল. তাই আমেরিকার লোকরা, এই ল্যাবরেটরী সম্বন্ধে খবর জানতে পেরে এই শহরকেই প্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরণের লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছিল. যাতে জাপান নিজের পারমানবিক বোমা বানাতে না পারে।
কিন্তু জার্মানীও পারমানবিক বোমা তৈরী করতে পারে নি. কিন্তু যদিও এই সম্ভাবনা বাদ দেওয়া যায় না যে, জার্মানীর নানা রকমের গবেষণা ও জাপানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে পরে আমেরিকার লোকরা ব্যবহার করেছিল. কারণ জার্মানীর ভি – ৩৫০ ডুবোজাহাজের ক্যাপ্টেনের রিপোর্ট টিডওয়েল খুঁজে পেয়েছিলেন আমেরিকার মহাফেজখানাতেই।
বিঃদ্রঃ ফেসবুক এর নিয়ম আনুযায়ী, আমাদের পোস্টে নিয়মিত লাইক না দিলে ধীরে ধীরে আমাদের পোস্ট আপনার অয়ালে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আপনার স্বার্থেই আমাদের পোস্ট নিয়মিত আপনার ওয়ালে দেখতে চাইলে প্রতিটি পোস্ট এ লাইক দিয়ে নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখুন। এছাড়াও গেট নোটিফিকেশন অন করে রাখতে পারেন বা আমাদের পেজ বুকমার্ক করে রাখতে পারেন, তাহলে আমাদের সব পোস্ট আপনার হাতের নাগালেই থাকবে। ধন্যবাদ!!!
পুরনো সময়ের কোন একটা রহস্যের সমাধান করতে গিয়ে প্রায়ই নতুন সব রহস্যের সৃষ্টি হয়ে থাকে. এই রকমই হয়েছে, অংশতঃ, সেই ইতিহাস নিয়ে, যা আমরা আজ বর্ণনা করতে যাচ্ছি. তাতে রয়েছে সোনার ভাণ্ডার, জাপানের তত্কালীন সর্বাধুনিক ডুবোজাহাজ ও হিরোশিমার বোমা বর্ষণের রহস্য.
১৯৯৫ সালে বিখ্যাত আমেরিকার গুপ্তধনের সন্ধানী পল টিডওয়েল রাশিয়ার একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণার জাহাজ ভাড়ায় নিয়েছিলেন, যাতে ছিল খুবই বিরল এক রাডার, যা দিয়ে প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থের খোঁজ করা সম্ভব হয়. তার সহায়তা নিয়ে আমেরিকার এই ব্যক্তি আশা করেছিলেন অতলান্তিক সমুদ্রের জলের নীচে জাপানের ডুবোজাহাজ আই – ৫২ খুঁজে বের করার, যা ১৯৪৪ সালে এক অজানা পরিস্থিতিতে ধ্বংস হয়েছিল. কিন্তু টিডওয়েল এই জাহাজেরই শুধু খোঁজ করছিলেন না, তিনি আসলে খোঁজ করছিলেন সেই জাহাজের মালপত্রের।
মহাফেজখানার দলিল পত্রের মধ্যে খুঁজতে গিয়ে টিডওয়েল নিজের জন্য বুঝতে পেরেছিলেন যে, মাল পরিবহনের জন্য বিশেষ ভাবে নির্মিত ডুবোজাহাজ আই – ৫২, ১৯৪৪ সালের গ্রীষ্মকালের শুরুতে গোপনে জাপান ছেড়ে চলে গিয়েছিল. এই জাহাজে করে জার্মানীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল দুই টন সোনা ও কিছু জাপানী অসামরিক বিশেষজ্ঞকে. সিঙ্গাপুরে এই জাহাজে বোঝাই করা হয়েছিল আরও ২২৮ টন সীসা, মলিবডেনাম ও উলফ্রাম ধাতু, আর তারই সঙ্গে ৬০ টন কাঁচা রবার. সবুজ অন্তরীপের কাছে আই – ৫২ জলে ভেসে উঠেছিল ও নিজের অবস্থানের দিক নির্দেশ বেতার তরঙ্গে পাঠিয়েছিল, যাতে জার্মানীর ডুবোজাহাজ ভি – ৩৫০ এটাকে খুঁজে পায় ও নিজেদের জাহাজে এই সব মালপত্র ও সোনা নিয়ে নিতে পারে. জাপানের লোকরা নিজেদের এখানে নিরাপদ মনে করেছিল, কারণ তারা জানতো না যে, আমেরিকা ও ব্রিটেনের লোকরা বহুদিন আগেই জাপানী সাঙ্কেতিক বার্তার অর্থ বোঝার ক্ষমতা অর্জন করে এই ডুবোজাহাজ দুটির দেখা হওয়ার জায়গায় এই জায়গার পাহারায় রত বিমানবাহী যুদ্ধ জাহাজ ভোগ কে বোমারু বিমান পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল. ডুবোজাহাজের নাবিকদের জন্য এই বিমানের আচমকা আবির্ভাব একেবারেই চমকানো ব্যাপার ছিল, কিন্তু তা স্বত্ত্বেও তারা জাহাজের সমস্ত ঢাকনা বন্ধ করে জলের তলায় ডুবে যেতে সক্ষম হয়েছিল. বিমানের চালক লেফটেন্যান্ট জেরি টেলর বাধ্য হয়েছিলেন জলে ভাসা শব্দ মাধ্যমে খোঁজার উপযুক্ত বয়া থেকে পাওয়া নির্দেশ অনুযায়ী বোমা ফেলতে. বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে, আমেরিকার পাইলটের দুটোর কোন একটা জাহাজও ডুবিয়ে দেওয়ার কোন সম্ভাবনাই ছিল না. আর তার আক্রমণ সফল হয়েছে কি না, তা অন্তত জাহাজের ভেসে ওঠা টুকরো দেখেও টের পাওয়ার উপায় টেলরের ছিল না, কারণ তার শেষ বোমা বর্ষণ, সে করেছিল একেবারে চরম অন্ধকারেই. পরের দিন সে জাহাজ ধ্বংসের চিহ্ন খুঁজতে এই এলাকায় উড়ে গিয়েছিল, কিন্তু তাদের দেখতে পেয়েছিল আক্রমণের জায়গা থেকে অনেক দূরে. তখন এই ব্যাপারটার উপরে মনোযোগ দেওয়া হয় নি. পরে জানা গিয়েছিল যে, আই – ৫২ তার যাত্রা থেকে আর ফিরে আসে নি।
সম্ভবতঃ হঠাত্ করেই আমেরিকার বিমানের জার্মান ও জাপানী ডুবোজাহাজের দেখা হওয়ার জায়গায় উপস্থিত হওয়া, পরে গবেষকদের ধারণা করতে বাধ্য করেছিল যে, দুই দলই জাপানের জাহাজ থেকে জার্মান জাহাজে মাল সরাতে পারে নি. এর মানে হল যে, দুই টন সোনা খোঁজার দরকার রয়েছে জাপানের ডুবে যাওয়া আই – ৫২ জাহাজের খোলের মধ্যেই. ঠিক সেটাই করতে চেয়েছিলেন পল টিডওয়েল, রাশিয়ার বৈজ্ঞানিক গবেষণার জাহাজ ভাড়া করে.কিন্তু তিনি কিছুই খুঁজে পান নি।
কিন্তু তাঁর অভিযান গুটিয়ে ফেলার বদলে, টিডওয়েল অন্য জায়গায় খোঁজ শুরু করেছিলেন. এর পরে তিনি নির্ভর করেছিলেন আমেরিকার যুদ্ধ বিজয়ের সামগ্রীর মহাফেজখানায় জার্মান ভি - ৩৫০ ডুবোজাহাজের ক্যাপ্টেন যে রিপোর্ট লিখেছিল, তার উপরে, যেখানে জাপানের আই – ৫২ ডুবে যাওয়ার দিক নির্দেশ দেওয়া ছিল অন্য. এর পরেই রুশ জাহাজের রাডার যন্ত্রে ধরা পড়েছিল সিগার আকৃতির ডুবে যাওয়া সাবমেরিনের চেহারা, যা মহা সমুদ্রের তলায় পড়েছিল. জলে টেলিভিশন ক্যামেরা সমেত যন্ত্র নামিয়ে দেখা হয়েছিল ও তাতে স্পষ্ট করেই দেখা গিয়েছিল যে, এই ডুবোজাহাজের খোল বোমার আঘাতে ফুটো হয়েছে, তাতে কিছু ভাঙা অংশ ও কিছু জাপানী সামরিক নৌবাহিনীর প্রতীক রয়েছে. এটা যে, জাপানের আই – ৫২ যুদ্ধ জাহাজ, সেই বিষয়ে আর কোনও সন্দেহ ছিল না. টিডওয়েল ও রুশ জাহাজের নাবিকদের আনন্দের সীমা ছিল না! কিন্তু রাশিয়ার এই অভিযানে যাঁরা অংশ নিয়েছিলেন, তাঁদের সাক্ষ্য অনুযায়ী তখন মহা সমুদ্রের নীচ থেকে কোন রকমের সোনা বা অন্য কোনও মালপত্র তোলা হয় নি – কারণ এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাতিই ছিল না. টিডওয়েল ফিরে আসার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তখনের মতো ঘোষণা করে যে, এক বছর বাদে নতুন অভিযান করে সোনা উদ্ধারের কাজ করবেন।
কিন্তু টিডওয়েল এই সোনা উদ্ধার করেছেন অথবা তা করার চেষ্টা করেছেন, তা সংবাদ মাধ্যমে কখনই দেখা যায় নি. আর রাশিয়ার সেই অভিযানে যাওয়া বিখ্যাত ভূতাত্ত্বিক গিওর্গি স্ত্রেঝেনক পরে ঘোষণা করেছিলেন যে, কোন রকমের সোনাই জাপানের এই ডুবোজাহাজে টিডওয়েল খুঁজে পান নি, তা কোথায় গেল – তা বোঝা যাচ্ছে না।
তারই মধ্যে জার্মানীর ডুবোজাহাজ ভি – ৩৫০ এর ক্যাপ্টেন তাঁর নিজের রিপোর্টে স্পষ্ট করেই জার্মান ভাষাতে লিখেছিলেন যে, আই – ৫২ জাহাজের সমস্ত মালপত্র জার্মানীর সাবমেরিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল. সবটাই, এমনকি সোনা সমেত. যদি তা আদতে থেকে থাকে।
আই – ৫২ জাহাজে বোমার আঘাতের গর্ত ও বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ধাতব অংশ প্রমাণ করে যে, এই জাহাজকে জলের নীচের কোন ডুবো বোমার আঘাতে ক্ষতি গ্রস্ত হতে হয় নি অথবা কোন টর্পেডো ফেটে তা হয় নি. তা হয়েছে জাহাজের মধ্যেই থাকা কোন বোমার আঘাতে. যদি ধরে নিতে হয় যে, এটা খাবার দাবার সমেত কোন একটা বাক্সের মধ্যে লুকিয়ে রাখা বোমা ফেটে হয়েছে, যা জার্মানীর জাহাজ থেকে এখানে তোলা হয়েছিল, তবে জার্মানীর সেই ক্যাপ্টেন আগে থেকে জানতে বাধ্য ছিল যে, কখন এই বোমার ঘড়ির কাঁটা বিস্ফোরণ ঘটাবে. আর তাই যথেষ্ট ঠিক করেই আই – ৫২ জাহাজের দিক নির্দেশ করতে সমর্থ হয়েছিল. এখন প্রশ্ন হল: কেন জার্মানদের নিজেদের সহকর্মী দেশের ডুবোজাহাজ ধ্বংস করতে হয়েছিল? তারা কি লুকোতে চেয়েছিল?
একটা ধারণা রয়েছে যে, জাপানের জাহাজে করে জার্মানদের জন্য সোনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল না, ছিল তার থেকেও মূল্যবান অন্য কিছু. যা জার্মানীকে রক্ষা করতে পারত, যখন তারা নিজেদের দেশের পূর্ব দিকে সোভিয়েত সেনা বাহিনীর কাছে সরাসরি যুদ্ধে ক্রমাগত হেরেই যাচ্ছিল আর পশ্চিম দিক থেকে তাদের তাড়িয়ে ঢুকে আসছিল অ্যাংলো- আমেরিকার জোটের সেনা. এটা সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম হতে পারত. এই ধারণা বর্তমানে জনপ্রিয় হয়েছে রুশ ইন্টারনেটে প্রকাশিত এক প্রবন্ধ ““উদয়ের সূর্য” অপারেশন অথবা আই – ৫২ সাবমেরিন নিয়ে একশ একটি রহস্য”. এই প্রবন্ধের লেখকের মতে, যিনি নিজের নাম প্রকাশ করতে অনিচ্ছুক, হিরোশিমার এক গোপন ল্যাবরেটরীতে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা হয়েছিল. তাই আমেরিকার লোকরা, এই ল্যাবরেটরী সম্বন্ধে খবর জানতে পেরে এই শহরকেই প্রথম আণবিক বোমা বিস্ফোরণের লক্ষ্য হিসাবে বেছে নিয়েছিল. যাতে জাপান নিজের পারমানবিক বোমা বানাতে না পারে।
কিন্তু জার্মানীও পারমানবিক বোমা তৈরী করতে পারে নি. কিন্তু যদিও এই সম্ভাবনা বাদ দেওয়া যায় না যে, জার্মানীর নানা রকমের গবেষণা ও জাপানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামকে পরে আমেরিকার লোকরা ব্যবহার করেছিল. কারণ জার্মানীর ভি – ৩৫০ ডুবোজাহাজের ক্যাপ্টেনের রিপোর্ট টিডওয়েল খুঁজে পেয়েছিলেন আমেরিকার মহাফেজখানাতেই।
বিঃদ্রঃ ফেসবুক এর নিয়ম আনুযায়ী, আমাদের পোস্টে নিয়মিত লাইক না দিলে ধীরে ধীরে আমাদের পোস্ট আপনার অয়ালে যাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। তাই আপনার স্বার্থেই আমাদের পোস্ট নিয়মিত আপনার ওয়ালে দেখতে চাইলে প্রতিটি পোস্ট এ লাইক দিয়ে নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখুন। এছাড়াও গেট নোটিফিকেশন অন করে রাখতে পারেন বা আমাদের পেজ বুকমার্ক করে রাখতে পারেন, তাহলে আমাদের সব পোস্ট আপনার হাতের নাগালেই থাকবে। ধন্যবাদ!!!
Post a Comment