চট্টগ্রামের সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ নতুন সরকার গঠনের পরে যা হতে পারে
আগামী ৫ জানুয়ারির ঘোষিত তারিখেই যদি নির্বাচন হয় এবং বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আবারও সরকার গঠন করে, তাহলে দেশে-বিদেশে এর কী প্রভাব পড়বে বা বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে কী ধরনের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হতে পারে- তা নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ চলছে।
অনেকেরই আশংকা, এরকমটি হলে দেশের চলমান সংঘাত আরও বাড়বে। বিরোধী দলের ওপর সরকারের দমননীতি আরও কঠোর হবে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আরও বেশি মারমুখি হবে। এক পর্যায়ে বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামি চোরাগোপ্তা হামলাও শুরু করে দিতে পারে।
এরকম বাস্তবতায় সোমবার সন্ধ্যায় বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের লাইভ টকশো ‘ফ্রন্ট লাইন’-এ অংশ নিয়ে প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এবং সাবেক সচিব ড. সা’দত হুসাইন বললেন আরও বড় আশংকার কথা।
অনুষ্ঠানে ড. হুসাইন আশংকা প্রকাশ করে বলেন, এরকম একতরফা নির্বাচনে, বিশেষ করে যে নির্বাচনে ইতিমধ্যে ১৫৪ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেলেন, তাতে করে প্রথমত দেশের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকেরও বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হবেন। তিনি হিসাব করে বলেন, ৩০০ আসনের মধ্যে যদি ১৫৪টিতেই নির্বাচন না হয়, তাহলে মোট ভোটারের ৫২ শতাংশ এবং মোট জনগোষ্ঠীর ৫২ শতাংশ সংবিধানে প্রদত্ত তাদের নাগরিক অধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
দ্বিতীয়ত, এরকম নির্বাচন দেশে-বিদেশে কারো কাছেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যথেষ্ট খারাপ হবে। বাংলাদেশ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ধারনা তৈরি হবে। ফলে বাংলাদেশের নাগরিকরা বিদেশের বিমানবন্দরে বাড়তি নজরদারির মধ্যে আসতে পারেন। ইমিগ্রেশন অফিসাররা বাংলাদেশী পাসপোর্ট দেখলে অতিরিক্ত সময় নিতে পারেন। এমনকি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রেও জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। জরুরি প্রয়োজনে অনেকে ভিসা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন।
সাবেক এই সচিব আরো আশংকা করেন, যদি এরকম একতরফা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটা সরকার গঠিত হয়, তাহলে সেই সরকারের নৈতিক ভিত্তি থাকবে অত্যন্ত দুর্বল। তখন সেই দুর্বল সরকারের আদেশ-নিষেধ মানার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের মধ্যে অনীহা তৈরি হতে পারে। এমনকি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সরকারের সব নির্দেশ নাও মানতে পারে। এতে করে রাষ্ট্রযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়বে।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, একতরফা নির্বাচন হলে বা যে প্রক্রিয়ায় আগামীতে সরকার গঠিত হবে বলে আভাষ পাওয়া যাচ্ছে, তার প্রথম শিকার হবে দেশের অর্থনীতি। কারণ সরকার গঠিত হলেও সেই সরকারকে টিকে থাকতে হবে অনেকটা জোরজবরদস্তি করে। আর এতে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হতে থাকলে বিনোয়োগ কমে যাবে।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির প্রায় ৬০ ভাগ এখনও আমদানি-রফতানি অর্থাৎ বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং দেশের অবস্থা স্থিতিশীল না থাকলে আমদানি-রফতানি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়বে অর্থনীতির ওপর।
এই দুই বিশেষজ্ঞই বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে সরকারের আজ্ঞাবহ উল্লেখ করে বলেন, যদি আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়, তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে নির্বাচন কমিশন। কারণ তখন এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, এই কমিশনের অধীনে ভবিষ্যতে কোনো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না।
এ সময় অনুষ্ঠানের সঞ্চালক দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী প্রশ্ন রাখেন, এই কমিশন তো সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। জবাবে মি. ভট্টাচার্য বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নিয়োগ দেয়া হলেও এরা (নির্বাচন কমিশন) যে সরকারের মনোনীত সেটা বুঝতে তো অসুবিধা হবার কথা না।
তাহলে এই সংকটের সমাধান কোথায়? সঞ্চালকের এমন প্রশ্নের জবাবে দেশের এই বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মানীয় ফেলো বলেন, ছিয়ানব্বইয়ের বিতর্কিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের পরে কিন্তু একটা ভালো কাজ হয়েছিল। অর্থাৎ ওই সংসদে সংবিধানে ত্রয়োদশ সংশোধনী এনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। সুতরাং আগামী ৫ জানুয়ারি যদি নির্বাচন হয় এবং সরকার গঠিতও হয়, তাহলে আমরা আশা করতে পারি যে, ছিয়ানব্বইয়ের মতো একটা ভালো সিদ্ধান্ত সংসদ নিতে পারে।
এ বিষয়ে ড. সা’দত হুসাইন যোগ করেন, ‘‘আমি মনে করি আগামী ১৫ বছরের মধ্যে দেশে নির্বাচনী ব্যবস্থায় একটা ব্যাপক পরিবর্তন আসবে এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের একটা শক্ত কাঠামো তৈরি হবে।’’
এ সময় সঞ্চালক প্রশ্ন করেন, ১৫ বছর তো অনেক সময়। জবাবে মি. হুসাইন বলেন, ‘‘আমি একটু সময় নিয়েই বলি।’
Post a Comment