ইসি এখন ‘বিবেকহীন অনুপ্রবেশকারী’
মিজানুর রহমান খান | আপডেট: ০১:৪১, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩ | প্রিন্ট সংস্করণ
১
কার্টুন: তুলিভোট গ্রহণের আগেই ক্ষমতাসীন দল ১৫১টির বেশি আসনে সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করায় নির্বাচনের ধারণা ইতিমধ্যে সমাহিত হয়েছে। এর আগের নির্বাচন বর্জন করতে আওয়ামী লীগের অবস্থান সমর্থন করে সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের কার্যকরতা এখনো বহাল আছে। এই রায় নবম সংসদ সংবিধানসম্মতভাবে এখনো টিকে থাকার অন্যতম ভিত্তি। এই রায় মতে ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে বিবেকহীন অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে রকিব উদ্দীন কমিশন ও দশম সংসদের ‘নির্বাচিত’ সংসদ সদস্যরা অভিযুক্ত হতে পারেন।
নির্বাচন কমিশন বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো রক্ষার নামে প্রকৃত বিচারে মৌলিক কাঠামো ধ্বংস করার নেতৃত্ব দিচ্ছে। তারা বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের মানমর্যাদা তারা বিশ্বের সামনে খাটো করেছে। নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া অন্তত এক ডজন মামলার রায়ের চেতনাও ধূলায় মিশে যাচ্ছে।
এসব রায় ‘জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকারকে’ সংবিধানের মৌলিক কাঠামো বলেছে। ১৯৯৮ সালে নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম মামলায় আপিল বিভাগ বলেছেন, ‘যে নির্বাচন নিরপেক্ষ, সঠিক ও ন্যায্য হয়নি সেই নির্বাচনের ফলাফল নির্বাচন কমিশন বাতিল করে পুনর্নির্বাচনের আদেশ দিতে পারে।’ সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের মতে, ‘সংবিধান সুষ্ঠু নির্বাচনকেই ধ্যান করেছে। জনগণের সামনে তাদের প্রতিনিধি বাছাইয়ের সুষ্ঠু নির্বাচনের ন্যায্য সুযোগ থাকতে হবে।’
উল্লেখ্য, কেবলমাত্র ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকার কারণে সুপ্রিম কোর্টের দুটি রায় ১২৩ অনুচ্ছেদ লঙ্ঘনকে সমর্থন করেছিল। মাহমুদুল ইসলামও লিখেছেন, ভোটার তালিকা ঠিক না থাকলে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান বাধ্যতামূলক নয়। ডকট্রিন অব নেসেসিটির কারণে সংবিধান লঙ্ঘন করা যাবে। কারণ, জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার হলো বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
এবারে ভোটার তালিকা দূরে থাক দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন যদি নির্বাচনী জননী হয়, তাহলে তারা সেই নিষ্ঠুর জননী, যে নিজ সন্তানকে গলা টিপে মেরে ফেলেছে কিংবা মেরে ফেলতে উদ্যত।
সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা বর্তমানে যা করছে, তা গুরুতর অসদাচরণ। এবং এই অসদাচরণের অভিযোগে তারা অপসারণযোগ্য অপরাধ করেছে এবং করছে। কিন্তু এই প্রতিকারের পথ বাস্তবে রুদ্ধ। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এস কে সিনহা ও বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞার সমন্বয়ে গঠিত কাউন্সিলের প্রতিবেদন ছাড়া তাদের কেউ অপসারণ করতে পারবে না। অবশ্য সংবিধানে এ কথাই লেখা আছে, প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) না চাইলে ওই কাউন্সিল কমিশনের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত শুরু করতে পারবে না।
কারণ, তারা ক্রমাগতভাবে ক্ষমতাসীন দলের তাঁবেদার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে। ১৯৭২ সালের আরপিওর ৯১ গ যে নির্বাচন কমিশনকে নির্দিষ্টভাবে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা লঙ্ঘন কেবল নয়, তারা একে অপ্রাসঙ্গিক করেছে। ওই বিধান ইসিকে ‘নিরপেক্ষ, সঠিক ও ন্যায্যভাবে’ নির্বাচন পরিচালনায় ‘প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী জারি করতে ক্ষমতা প্রয়োগ এবং প্রাসঙ্গিক অন্যান্য আদেশ প্রদান করতে পারবেন’ বলে উল্লেখ আছে। ইসি তার সহজাত ক্ষমতাবলে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বন্ধ করে দিতে পারে। অথচ তারা বলছে তারা ‘আইনি প্রক্রিয়া’ চালু রেখেছে। মাহমুদুল ইসলামের মতে, ইসির দায়িত্ব প্রশাসনিক ধরনেরই কেবল নয়, কতিপয় ক্ষেত্রে বিচারিক ও আইন প্রণয়নগত ক্ষমতাও রয়েছে। অবাধ নির্বাচন তদারকিতে তার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা আছে। ১৯৯৩ সালে আফজাল হোসেন বনাম সিইসি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেছেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এটাই ধরে নিতে হবে যে, ইসির সব ধরনের ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব রয়েছে।
বিতর্কিত নির্বাচন প্রক্রিয়ার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে জাতীয় পার্টি ইতিমধ্যে একটি রিট দায়ের করেছে। জেনারেল এরশাদের জাতীয় পার্টির রহস্যময় অবস্থানের দিক থেকে এই রিট কতটা বিচ্ছিন্ন, তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের মীমাংসিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু হবে এবং সরকারি প্রজ্ঞাপনে ফলাফল ঘোষণা দিয়ে তা শেষ হবে। এবং এর পরই কেবল ‘নির্বাচনী দরখাস্ত’ দিয়ে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে এই নির্বাচনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করা যাবে। অবশ্য নির্বাচনসংশ্লিষ্ট আইনে ‘বিদ্বেষ’ ছিল, এটা প্রমাণ করতে পারলে রিট চলবে। ত্রয়োদশ সংশোধনী হঠাৎ ফেলে দেওয়ায় নির্বাচনী আইনে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা হয়েছে।
সংবিধানে এ বিষয়ে সুপরিকল্পিতভাবে ঘাপলা রেখে দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে যেকোনো একটি পথ বেছে নেওয়া হবে। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বশীল সূত্র ১০ জানুয়ারির মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানিয়েছে। অথচ ১২৩ অনুচ্ছেদের ৩ দফার শর্তে বলা হয়েছে, সংসদ রেখে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিত সদস্যরা সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি ২০১৪ সালের আগে ‘কার্যভার গ্রহণ করতে পারবেন না’। ওই তারিখের আগের সম্ভাব্য চিত্র হচ্ছে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন। রাষ্ট্রপতিকে বলতে হবে তিনি পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন এবং তাঁর উত্তরসূরি না আসা পর্যন্ত দায়িত্ব চালাতে বলবেন। কারণ, পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করলে শেখ হাসিনা দশম সংসদের সংসদ নেতা নির্বাচিত হতে পারবেন না। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাঁর শপথ নেওয়া সম্ভব হবে না।
১৯৯২ সালের ৩০ জুলাই কুদরত ইলাহি পনির বনাম রাষ্ট্র মামলায় সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ প্রশ্ন তুলেছিলেন যে, ‘সংসদ যদি উন্মাদ হয় তাহলে বিচার বিভাগ কীভাবে সুড়ঙ্গের শেষের আলো হতে পারে? সংসদ পাগলা হলে জনমত, রাজনৈতিক দল ও নির্বাচন কি করবে?’ পরিহাস হচ্ছে এখন ইসি যেদিকে বাংলাদেশকে ঠেলছে তাতে একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে তার মধ্যে ‘পাগলামির’ লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে।
সংসদীয় গণতন্ত্রে যেকোনো নির্বাচনে ‘ঝুলন্ত সংসদ’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। উপরন্তু কোয়ালিশন সরকার গঠনের সম্ভাবনাও থাকে। কিন্তু এবারে ভোটের আগেই এর ফয়সালা হয়ে গেছে। এর ফলে আগামী ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনসহ পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়াটাই সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। নির্বাচন নিয়ে এত বড় ধ্বংসাত্মক পাতানো খেলা যে সম্ভব, তা হয়তো এর আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।
নির্বাচন কমিশন যে ফলাফল ঘোষণা করেছে তা অবৈধ ও সংবিধানপরিপন্থী। ২০০৮ সালের নির্বাচন কমিশন বৈধতার প্রশ্নে প্রায় অভিন্ন অবস্থার মুখোমুখি হয়েছিল। মাসুদ সোবহান বনাম নির্বাচন কমিশন মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রশিদ ও মোহাম্মদ আশফাকুল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ ওই রায় দিয়েছিলেন
বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম লিখেছেন, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ পর্যালোচনায় এটা স্পষ্ট যে সংবিধান সম্ভাব্য সকল উপায়ে এটাই নিশ্চিত করেছে যে প্রশাসনের সকল স্তরে
জনসাধারণের কার্যকর অংশগ্রহণের মাধ্যমে প্রশাসনের প্রতিনিধিত্বশীল চরিত্র বজায় রাখতে হবে। জনসাধারণের আশা ও আকাঙ্ক্ষা কেবলমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এবং সে উদ্দেশ্য অর্জনের একমাত্র উপায় হচ্ছে সংসদের অর্থপূর্ণ নির্বাচন করা।’ এটা অনস্বীকার্য যে, বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া অর্থপূর্ণ নয়।
বিচারপতি আশফাক এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে ১৯৫৯ সালের পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া নূর হোসেন বনাম পূর্ব পাকিস্তান, সৈয়দ গোলাম আলী বনাম রাষ্ট্র, ওসমান গনি বনাম মনিরউদ্দিন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের ১৯৫০ সালের এ কে গোপলান বনাম মাদ্রাজ, ১৯১৭ সালে প্রিভি কাউন্সিলে দেওয়া মন্ট্রিল রেলওয়ে কোম্পানি বনাম নরমানদিন, ১৯৭৯ সালে প্রিভি কাউন্সিলের দেওয়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বনাম ফিশার ইত্যাদি মামলার রায় পর্যালোচনা করেন। তিনি এর আলোকেই মন্তব্য করেন যে বাংলাদেশের সংবিধানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ৯০ দিনের নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া আছে, তেমনটা অন্যান্য সংবিধানে দেখা যায় না। কোনো গণতন্ত্রে এটা অনুমান করা যায় না যে একটি সংসদীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময় থাকবে। আমাদের সংবিধান প্রণেতারা তাঁদের প্রজ্ঞা দিয়ে হয়তো ভেবেছিলেন যে একটি সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া সমীচীন হবে, যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য সংবিধানের অভিপ্রায়ের সঙ্গে ইতিবাচক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। কিন্তু তাঁরা সচেতনভাবে এই চিন্তা থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন যে যদি নির্দিষ্ট সময়ে নির্বাচন না হয় তখন পরিণতি কী দাঁড়াবে। উত্তর তাঁরা দেননি।
এরপর বিচারপতি আশফাক লেখেন, ‘এই বিধান নিশ্চয়ই উদার ও নমনীয়ভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ রয়েছে। আমরা যদি একটি কঠোর ও বাধ্যতামূলক ব্যাখ্যার ওপর দাঁড়াই তাহলে দেখা যাচ্ছে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদ থেকে উৎসারিত সংবিধানের সামগ্রিক উদ্দেশ্যই নস্যাৎ হয়ে যায়। কিন্তু যদি উদারনৈতিক ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে কোনো একটি বিরাট উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সমঝোতার মাধ্যমে মোকাবিলা করা যায়।’ এই ‘সমঝোতা’ক্রমেই ২০০৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে গিয়েছিল।
আমরা যদি হাইকোর্টের রায়কে প্রচলিত আইন মানি, তাহলে রকিব উদ্দীন কমিশন এবং তথাকথিত নির্বাচিতরা এখন আইনের চোখে ‘বিবেকহীন অনুপ্রবেশকারী’ (আনস্ক্রুপুলাস ইনফিলট্রেটরস)।
তবে পরিহাস হলো, এই বিবেকহীন অনুপ্রবেশকারীরা বাংলাদেশ সংবিধানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন। শিল্প ও পূর্তমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ ভারত থেকে ফিরে জাতীয় সংসদে তথ্য প্রকাশ করেছিলেন যে, সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন করা গণতান্ত্রিক। ভারত ১৫টি লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে আটটি সংসদ রেখে করেছে। এর মানে হলো ভারত যা করে তাই গণতান্ত্রিক ও অনুসরণীয়। সে কারণেই সংসদ রেখে সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। তাহলে এই ভারতের সুপ্রিম কোর্ট গত ২৭ সেপ্টেম্বর দেওয়া এক রায়ে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস সরকারের সলিসিটর জেনারেলের একটি যুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছেন। যুক্তিটি ছিল, ‘ভোটাধিকার নাগরিকের মৌলিক অধিকার নয়। এটা একটা সংবিধিবদ্ধ অধিকার। তাই আইন যেমন সুযোগ দেবে তেমনটাই ভোটাররা মানবে।’
আওয়ামী লীগাররা কার্যত এটাই বলছে। কেউ না এলে তারা প্রার্থী পাবে কোথায়? এই প্রশ্ন করার আগে তারা বলে না যে, নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে নিজেদের পায়ের মাপে করতে গিয়ে তারা গণতান্ত্রিক শর্ত পূরণ করেনি। ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট কংগ্রেসের দুষ্টবুদ্ধি নাকচ করেছেন। এই রায় কীভাবে আমাদের জন্য প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে আলোচনা পরবর্তী পর্যায়ে।
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
Post a Comment