Header Ads

test

MYSTERIOUS STONE BD

রহস্যময় জোড়া পাথর কানে একটি কথা বেশ কিছু দিন ধরেই আসছে -দুইটি পাথর নাকি আছে যে দুইটি পাথর রহস্যময়! গ্রামজুড়ে এমনকি পাশের গ্রামগুলোতেও নাকি এই জোড়া পাথর সম্পর্কে কিছু অলৌকিক বিশ্বাস রয়েছে। আর সেই বিশ্বাসে জোড়া সেই পাথর দিন দিন আরও রহস্যের ধূম্রজাল তৈরি করছে। সকাল সকাল বেড় হয়ে গেলাম। কেননা বগুড়া শহর থেকে আরো ৩৫ কিলো ভেতরে সোনাতলা উপজেলা আর উপজেলা থেকে আরও ১০ কিলো ভেতরে গেলেই কাবিলপুর গ্রাম। সেই গ্রামেই এই রহস্যময় জোড়া পাথরের অবস্থান। বাসে করে গ্রামের খড় ছোড়ানো আঁকাবাঁকা রাস্তায় সকালের মনোরম দৃশ্য সবাইকে মুগ্ধ করে। এক সময় বাসের হেলপার বললেন, আপনারা কাবিলপুরে এসে গেছেন। বাস থেকে নামার পর এলাকায় জোড়া পাথরে কথা বলতেই সবাই দেখিয়ে দিলেন। যেখানে আমরা দাঁড়িয়ে আছি ঠিক ডানদিকে মাত্র ৩ মিনিটের রাস্তা হাঁটলেই সন্ধান মিলবে রহস্যময় সেই জোড়া পাথরের। জনমানবহীন এলাকা দেখতেই গা ঝিম ঝিম করছে। নিশ্চুপে দাঁড়ানো এই জোড়া পাথরটিকে ঘিরেই বছরের পর বছর রহস্য হচ্ছে আর তার বিশ্বাসে জড়িয়ে আছে। জোড়া পাথর সম্পর্কে জানতে চাইতেই, মতিবালা প্রাং এলাকার প্রবীণ নারী বললেন, তালতলার ঐ জোড়া পাথরের মাথা দুইটি যেদিন এক সঙ্গে লেগে যাবে সেদিন দুনিয়া ধ্বংস হবে। ঠিক একই সুরে সুর মেলালেন গ্রামের আরেক মহিলা মালা বানু। তিনিও জানালেন কেয়ামত হবে এই দুই পাথর এক সঙ্গে লেগে গেলে। তাঁরা নাকি তাঁদের দাদাদের কাছে এই কথা শুনেছে আবার তাঁদের দাদারা শুনেছে তাঁদের দাদাদের কাছ থেকে। আশ্চর্য হলেও সত্য এলাকার অধিকাংশ মানুষ এই কথা বিশ্বাস করেন। দিন দিন নাকি এই পাথর দুইটি এগিয়ে কাছাকাছি আসছে। দৈর্ঘ্যে, প্রস্থে ও উচ্চতায় বৃদ্ধি পাচ্ছে পাথর দুটি। মাটি থেকে সমান্তরালভাবে ওপরের দিকে উঠে যাওয়া দুটি পাথরের মধ্যে পূর্ব দিকের পাথরটির উচ্চতা সাড়ে ৫ ফুট এবং পশ্চিম দিকের পাথরটির উচ্চতা ৫ ফুট। প্রস্থের দিকে ১৪ ইঞ্চি-ই দুইটি পাথর তবে এদের প্রস্থ নাকি আগে ৬ ইঞ্চি করে ছিল জানালেন আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ ৭০ বয়সী ইলিয়াস কবির। তিনি আরও জানালেন, জনশ্রুতি আছে, জোড়া পাথরের স্থান ঘেঁষে বয়ে যাওয়া নদী থেকে এক সময় জল কুমির এসে রহস্যময় জোড়া পাথর দুটিতে শ্রদ্ধা ভরে মাথা নত করে চলে যেত। সে অনেক আগেকার কথা। তবে পাথরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে তিনিসহ অনেকেই জানালেন। ছোট্ট একটি তালগাছের নিচে রহস্যময় পাথর দুইটির জন্ম। তবে এদের সম্পর্কে কেউ সঠিকভাবে কিছু বলতে পারে না। কারও কারও মতে এই পাথর দুইটি পুরাকালে এই অঞ্চলের কোন অধিপতি হাতি বেঁধে রাখতেন। আবার অনেকে এই পাথর দুইটিকে প্রকৃতি প্রদত্ত মঙ্গলের প্রতীক মনে করেন। বর্তমানে এই অঞ্চলের হিন্দু ও মুলসমান সম্প্রদায়ের অনেকেই এই পাথর দুইটিকে ভক্তি করে থাকেন। কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সফল হওয়ার জন্য অনেকেই এই পাথর দুটিকে উদ্দেশ করে মানত করেন। তারপর উদ্দেশ্য পূরণ হলে পাথরের পাদদেশে দিয়ে আসেন কথা সিঁদুর, ধুপধোঁয়া ইত্যাদি। এক সময় তালতলার নিচে অলৌকিক জোড়া পাথরের পাদদেশে পূজা হতো, মেলা বসত। দূরদূরান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ লোক এসে তাদের মনোবাসনা পূরণের জন্য এখানে জমায়েত হতেন। গোরস্থান সংলগ্ন কিছুটা উঁচু জায়গায় খাড়াভাবে অবস্থিত ৫ ফুট উঁচু ২টি রহস্যময় পাথর ঠিক কত বছর আগে থেকে বগুড়া জেলার সোনাতলা উপজেলার কাবিলপুর গ্রামের জঙ্গলে আবি®কৃত হয়েছে তা অনুমান করে কেউ বলতে পারেন না। তবে জোড়া পাথরটির স্থান এ অঞ্চলের হিন্দু, মুসলমানসহ সব ধর্মের লোকজনের কাছে একটি তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা জানালেন, সোনাতলা উপজেলায় বিক্ষিপ্তভাবে কিছু প্রতœতত্ত্ব সম্পদ রয়েছে। জোড়া পাথরের স্থানটি প্রায় দুই বিঘা পরিমাণ জমি নিয়ে বেষ্টিত হলেও এর বেশিরভাগ অংশজুড়ে রয়েছে গণকবরস্থান। আরেকটি আশ্চর্য করা বিষয় হলো সেখানে রয়েছে দুইটি ২৫ হাত লম্বা কবর। তারা নাকি স্বামী-স্ত্রী তবে তাদের সম্পর্কেও কেউ-ই সঠিক তথ্য দিতে পারলেন না। তারা আরও জানান, জোড়া পাথরটি প্রতœতত্ত্ব সম্পদের একটি প্রাচীন নিদর্শনও হতে পারে। আবার কেউ কেউ এই পাথর দুটি সম্পর্কে মন্তব্য করেন, অনেক দিন আগের কথা। সে সময় সোনাতলা এলাকাটি ময়মনসিংহের দেওয়ানগঞ্জ থানার অধীনে ছিল। তখন বারভূঁইয়ারা বাংলা শাসন করত। বারভূঁইয়ার একজন ঈশা খাঁ বিদ্রোহ করেন দিল্লিশ্বরের বিরুদ্ধে। বিদ্রোহ দমনে সেনাপতি মানসিংহ আসেন বাংলায়। ছাউনি ফেলেন সোনাতলায়র কাবিলপুরে কিন্তু মানসিংহ যেখানেই যেতেন সেখানেই তার পছন্দের হাতিটা নিয়ে যেতেন। তাই এখানে ছাউনি ফেলার সময় হাতি বাঁধার জন্য দুইটি পাথর পুঁতে সেখানে হাতি বেঁধে রাখতেন। এমনটাই নাকি শুনেছেন এলাকার প্রবীণ ব্যক্তি সুশের দাশ। তবে তাঁর এই কথার সাথে এক মত নয় এলাকার আরেক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি ইউসুফ সরদার। তিনি বললেন অন্য কথা, পীর ফতেহ আলী মতান্তরে ‘ফতেহউল্ল্যা’ সব সময় ঘোড়ায় চড়ে বেড়াতেন বলে তিনি ঘোড়া পীর নামে পরিচিত ছিলেন। এই পীর সাহেব এখানেই ঘোড়া বেঁধে রাখতেন বলে জনশ্রুতি আছে। এ রহস্যময় পাথরের পাশে থাকা আবদুল আলী জানান, কবে থেকে এই দুটি পাথর আছে তা বলতে পারি না। তবে বাপ দাদার মুখে শুনেছি এই রহস্যময় পাথরের কথা। তিনি জানালেন, প্রথম অবস্থায় পাথরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কম ছিল। আর্শ্চয হলেও সত্যি এই পাথরের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বৃদ্ধি পাওয়ার রহস্যের ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে কেউ কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। তবে সবাই এই পাথর দুটিকে প্রকৃতির স্বভাবসুলভ সৃষ্টি বলেই মনে করেন। র্দীঘ দিন থেকে সোনাতলার কাবিলপুরে বিস্তীর্ণ এক নির্জন কবরস্থানে পাথর দুটি কালের সাক্ষী হিসাবে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। তবে স্থানীয়ভাবে যাঁরা দীর্ঘদিন থেকে এটিকে দেখে আসছেন তাঁরা এ পাথর দুটিকে শ্রদ্ধাভরে মান্য করে চলেছেন। কারণ, পাথর দুটির উচ্চতা পূর্বে সমতল ভূমির সমান থাকলেও বর্তমানে এর উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট অতিক্রম করেছে। দিন দিন এ পাথরের উচ্চতা কেনই বা বাড়ছে তা নিয়ে স্থানীয় কারও কোন মাথাব্যথা না থাকলেও এ পাথর দুটির অলৌকিক কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। স্থানীয় এবং দূরদূরান্ত থেকে বহু হিন্দু, মুসলমান উভয় সম্প্রাদয়ের লোক এই পাথর দুটিকে ভক্তি করে যাচ্ছেন। কারও কোন মানত থাকলে এই পাথরকে সাক্ষী রেখে মানত করে থাকেন এবং মানত পূরণ হলে শ্রদ্ধাভরে তাঁরা এসে পাথরের গায়ে দুধ ঢেলে দিয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এত কিছুর পরও পাথর দুটিকে সুন্দরভাবে সংরক্ষণ করার ব্যাপারে কারও কোন উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ করলেন এলাকার জনগণ। প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর স্থানীয় প্রশাসন কিংবা এলাকার কোন সংগঠন থেকে পাথর দুটির ব্যাপারে কোন যতœ নেয়া হয় না। আর সে কারণে প্রকৃতির এই আশ্চর্য দুটি পাথর অবহেলায় শ্রীহীন হয়ে পড়েছে। প্রতœতত্ত্ব সম্পদের এই আশ্চর্য নিদর্শনসহ আশপাশ এলাকার অনেক সম্পদ সঠিক সংরক্ষণ করার ব্যাপারে অনেক সুধীজন দাবি জানিয়েছেন। পাথর দুইটি যেখানে অবস্থান করছে সে এলাকাটি অরক্ষিত। এ ব্যাপারে এ এলাকার চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন জানান, প্রায় ৩০ বছর আগে পাথর দুটির রহস্য উন্মোচনের জন্য তা তোলার ব্যাপারে অনেক চেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু ধর্মভীরু এলাকার লোকদের তা আর হয়ে ওঠেনি। তবে গত ৬ বছর আগে বেলাল নিজেই পাথর দুটির রহস্য জানার জন্য পশ্চিম পাশের পাথরটি মাটি থেকে তুলে ফেলার চেষ্টা করা হয় কিন্তু পাথরটি কোথা থেকে শুরু তা গভীরভাবে মাটি খননের পরও জানা যায়নি। সেখানে অলৌকিক কিছু পাওয়া যায়নি তবে মাটির নিচে যত খোঁড়া হয়েছে পাথরটি অদ্ভুত লেগেছে সবার কাছে। GPJS

No comments