Header Ads

test

Now phrilyansinye women to come forward at the time!


ফ্রিল্যান্সিংয়ে মেয়েদের এগিয়ে আসার সময় এখনই! প্রিয় পাঠক, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ক্ষেত্রে গত কয়েকবছর বাংলাদেশে অনেকটা নিরব বিপ্লব ঘটে গেছে। হাজারো তরুণ-তরুণী বর্তমানে এক্ষেত্রে কাজ করছেন, দেশে আসছেন লাখো ডলার রেমিটেন্স। বাংলাদেশী একজন সফল মেয়ে ফ্রিল্যান্সার এমরাজিনা ইসলাম। তাঁর ইন্টারভিউ নিয়েছিলেন প্রথম আলো-র সহ-সম্পাদক মিন্টু হোসেন। ডেভসটিম ইনস্টিটিউটের ফলোয়ারদের জন্য এখানে প্রকাশ করা হল। ফ্রিল্যান্সিংয়ে আমাদের দেশ থেকে অনেক ভাল করছেন, এ কথা যেমন সত্য। তেমনি দু:খজনক সত্য হচ্ছে এক্ষেত্রে মেয়েরা প্রচুর পিছিয়ে রয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাপী ফ্রিল্যান্সিং মেয়েদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়। ফ্রিল্যান্স ইন্ডাস্ট্রি রিপোর্ট ২০১১ অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী ৬৬.৯ শতাংশ ফ্রিল্যান্সারই মেয়ে। পক্ষান্তরে বাংলাদেশ সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি সার্ভে থেকে পাওয়া তথ্যমতে, বাংলাদেশে মেয়ে ফ্রিল্যান্সারদের সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। আমাদের দেশের মেয়েদের এক্ষেত্রে এগিয়ে আসার এখনই সময়। নিভৃতে, চোখের আড়ালে ঘরের মধ্যে যখন যেভাবে খুশি অফিস সাজিয়ে অনলাইনে কাজ করে যাচ্ছেন গৃহবধূ এমরাজিনা, আয় করছেন ইচ্ছামতো। জন্ম নীলফামারীতে আর তাঁর শ্বশুরবাড়ি ঢাকার উত্তরায়। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে ছোটো বড় প্রকল্প বাদেই দুই হাজার ঘণ্টা কাজ করে ফেলেছেন তিনি। অনলাইন মার্কেটপ্লেস ইল্যান্স, ওডেস্কে গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করছেন এমরাজিনা। পড়াশোনা তাঁর ইংরেজিতে অনার্স পর্যন্ত। পাশাপাশি সুযোগ বুঝে চারু ও কারুকলায় পড়াশোনা করেছেন তিনি। শখ তাঁর আঁকা-আঁকিতে। এই শখটাই এখন তাঁর পেশা। বিয়ের আগে থেকেই চাকরির পেছনে না ছুটে নিজের উদ্যোগেই অনলাইনে কাজ শুরু করেন তিনি। বিয়ের পরও সংসারের নানা কাজের পাশাপাশি প্রতিদিন কাজ করে যাচ্ছেন অনলাইনে, আয় করছেন। তাঁর কাজে স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়িসহ পরিবারের সবার কাছ থেকেই উত্সাহ পাচ্ছেন এমরাজিনা। এমরাজিনা জানিয়েছেন তাঁর অভিজ্ঞতার কথা। এমরাজিনা বলেন, ‘ শৈশব থেকেই চোখে হাজার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু মেয়ে হিসেবে নানা বাধায় অনেক স্বপ্ন পূর্ণতা পায়নি। তবে লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। অনার্সে পড়া অবস্থায় বাবা মারা গেলেন। মা গয়না বিক্রি করে পড়ার খরচ দিতে লাগলেন। তখন আমার প্রয়োজন ছিল একটা চাকরির। বিক্রয় প্রতিনিধির চাকরি এমনকি টিউশনি করেও লেখাপড়া চালিয়ে গেছি। কাজ করেছি কল সেন্টারেও। কিন্তু নিজের সৃজনশীলতা কাজে লাগাতে পারি এমন কোনো কাজ পাচ্ছিলাম না। শেষ পর্যন্ত নিজের দক্ষতাকে কাজে লাগাতে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ শুরু করি।’ অনলাইনে কাজ পেশা নয়? এখন বাংলাদেশের অনেকেই অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করেন। কিন্তু এখানে মেয়েদের সংখ্যা অনেক কম। অনেক বিবাহিত মেয়ে ঘরে বসে থাকেন। তাঁরাও ঘরের কাজের পাশাপাশি অনলাইনে কাজ করতে পারেন। তবে একাজে পরিবারের সহযোগিতা আর সচেতনতা প্রয়োজন। আর যে কাজে আগ্রহী হবে তাঁর দরকার পেশাদার মনোভাব। তবে, অনলাইনে কাজ করার পূর্বশর্ত হচ্ছে- কাজের দক্ষতা। আপনার জানা যেকোনো কাজে দক্ষতা থাকলে তাকে কাজে লাগাতে পারেন। কথাগুলো এমরাজিনার। এমরাজিনা জানিয়েছেন, অনেক পরিবারে মেয়েদের বাইরে কাজ করাটা ভালোভাবে দেখে না। এক্ষেত্রে ঘরে বসেই তাঁরা আয় করতে পারেন। তবে ভুয়া কোনো ওয়েবসাইটে ক্লিক করে নয়। তাঁরা নিজের কাজের দক্ষতাকে ইল্যান্স, ওডেস্ক, ফ্রিল্যান্সার সাইটগুলোতে লাগাতে পারেন। ঘরে বসেই গ্রাফিকস ডিজাইন, অনুবাদ, ব্লগ, এসইওসহ অনলাইনভিত্তিক নানা কাজ তাঁরা করতে পারেন। এতে তাঁদের কাজে দক্ষতা আসবে, আর্থিক স্বচ্ছলতা আসবে। একে পেশা হিসেবেও বেছে নিতে পারেন। স্বামীর সঙ্গে আলোচনা করে কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে ঘরে বসেও আয় করতে পারেন। এমরাজিনার অভিজ্ঞতা এমরাজিনা জানান, এক বন্ধু আমাকে প্রথমবারের মত অনলাইন মার্কেটপ্লেসে কাজ করার কথা বলেছিল। তখন আমার মনে নানা প্রশ্ন জাগে। কীভাবে কাজ করব, কি কাজ করব, পারব তো? কাজের পদ্ধতি কে শিখিয়ে দেবে এরকম নানা প্রশ্ন। তবে সাহস করে ওডেস্ক আর ইল্যান্সে আমি অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলি। সুন্দরভাবে প্রোফাইল সাজায়। এরপর আমি কোন কাজগুলো পারি সেগুলো খুঁজে আমার প্রস্তাব জমা দিতে শুরু করি। এমরাজিনা বলেন, কাজ শুরুর আগে নিজের ওপর বিশ্বাস রাখা জরুরি। অনলাইন মার্কেটপ্লেসগুলোতে প্রতিনিয়ত নানা কাজের পোস্ট জমা পড়ে। এখন প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেক বেড়ে গেছে। বিশেষ করে নতুনদের জন্য কাজ পাওয়া অনেক কষ্টের। এজন্য ধৈর্য থাকতে হবে। এমরাজিনা বলেন, আঁকা-আঁকি করার শখ আর মোটামুটি গ্রাফিকস ডিজাইন জানা ছিল। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, আমি গ্রাফিকস ডিজাইনের কাজ করব। এজন্য আরও দক্ষ হতে আমি গ্রাফিকস ডিজাইনের কোর্স করি। কোর্সের পর বাড়িতেও অনুশীলন করেছি আমি। এসব ঘটনা বিয়ের আগের। এমরাজিনা তাঁর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, ধৈর্য ধরে অনলাইন মার্কেটপ্লেসে দেখতাম যে কি ধরনের কাজের দক্ষতা চাওয়া হচ্ছে। আমি সে ধরনের কাজের অনুশীলন করতাম। আমার একাজে সহযোগী বন্ধুর নাম গুগল সার্চ ইঞ্জিন। গুগলের সার্চের মাধ্যমে আমি অনেক কিছু জেনেছি। যারা কাজ করতে আগ্রহী তাঁরা গুগলের সার্চে গিয়ে প্রয়োজনীয় নানা তথ্য পেতে পারেন। এমরাজিনা বলেন, নতুন ছিলাম, তাই প্রথম কাজ পেতে তিন মাস সময় লেগেছিল আমার। কাজে আবেদন করতে করতে ক্লান্ত, কারণ নতুন বলে আমার আবেদন বাতিল হয়ে যেতো। কিন্তু আমি ধৈর্য হারাইনি, চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছি। সাফল্যের সোনার হরিণ প্রথম কাজ পাওয়ার পর ঠিকঠাকভাবে সতর্কতার সঙ্গেই কাজটি শেষ করেছিলাম- কাজের শুরুটা সম্পর্কে এভাবেই জানান এমরাজিনা। তিনি বলেন, প্রথমে টাকা আয়ের কথা মাথায় আনিনি। চেষ্টা ছিল আগে এ প্ল্যাটফর্মে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করা। তবে সংসারের নানা ঝামেলা সামলে এভাবে সময় দেয়াটা কষ্টকর। তবে শেষতক সাফল্যের সোনার হরিণের দেখা আমি পেয়েছি। আমেরিকা, কানাডা, আয়ারল্যান্ড, সৌদি আরব, অ েআরো কয়েকটি দেশের ক্লায়েন্টদের জন্যে কাজ করেছি এবং আমার কাজ তাঁদের প্রশংসা পেয়েছে। আমাকে কাজের জন্য আর ভাবতে হয়নি। আমি এখন শ্বশুর-বাড়িতে বসেই অবসরে কাজগুলো সেরে ফেলি। ইল্যান্স, ওডেস্ক মিলিয়ে দুই হাজার ঘণ্টা কাজ করে ফেলেছি। অন্যান্য প্রকল্পেও কাজ করেছি। প্রথমে ঘণ্টা প্রতি কাজের জন্য পাঁচ ডলার করে পেতাম। এখন আমার আয় ঘণ্টা প্রতি প্রায় ২০ ডলার। ‘এমরাজিনা, আপনার ডিজাইন অসাধারণ হয়েছে’ নিজেকে আত্মনির্ভরশীল ভাবেন এমরাজিনা। তাঁর স্বামীও তাঁকে উত্সাহ দেন। এ কাজ নিয়ে দুজন আলোচনা করেন তাঁরা। এমরাজিনা জানিয়েছেন, সঙ্গে ল্যাপটপ, ইন্টারনেট থাকলে আর ইংরেজি বুঝতে পারলে যেকোনো জায়গায় কাজ করা যায়। সংসার করতে গিয়ে চাকরি বা কাজের ক্ষতি হবে, এটা ভাবতে হয় না। বাড়িতেই নিজের সুবিধামত স্থানে বসে, সুবিধামতো সময়ে সাজিয়ে ফেলি নিজের অফিস। নিজে আয় করি বলে কেনাকাটার জন্য স্বামীকেও বিরক্ত করতে হয় না। বরং পরিবারকে সাহায্য করতে পারি। সবার মুখে হাসি দেখলে ভালোই লাগে। সবচেয়ে ভালো লাগে যখন বিদেশিদের কাজ করে দিই আর তারা বাংলাদেশি গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে আমার প্রশংসা করে লেখে- ‘এমরাজিনা অসাধারণ হয়েছে আপনার ডিজাইন’। এমরাজিনা জানিয়েছেন, বাংলাদেশের অনেক মেয়ে লেখাপড়ার পরে আর কিছু করেন না। বিয়ে হয়ে গেলে তাঁরা ঘর-সংসার সাজাতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এরপর পারিবারিক নানা কাজে জড়িয়ে পড়েন। পরিবারের নারী সদস্যরাও অবসর সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন। এ বিষয়ে সবার সচেতনতা জরুরি বলেই মনে করছেন এমরাজিনা। এমরাজিনার ১০ পরামর্শ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যারা কাজ করতে আগ্রহী তাঁদের জন্য এমরাজিনা পরামর্শ দিয়েছেন। তাঁর পরামর্শ: ১. পরিবারের সবার সহযোগিতা নিয়ে সবার আগে মানসিক বাধা দূর করুন ২. নিজের দক্ষতা বাড়ান ৩ .অন্যেরটা দেখে নয় বরং নিজের পছন্দ ও আগ্রহ যে বিষয়ে বেশি সেই বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করুন। ৪. কোন কাজ করলে বেশি টাকা আয় করা যাবে তা না ভেবে কোন কাজটি আপনি খুব ভাল ভাবে করতে পারবেন তা চিন্তা করুন। কাজ ভাল পারলে আপনাকে টাকার পেছনে ছুটতে হবে না। ৫. ইংরেজি ভাষা বোঝা, লেখা ও বলার উপর জোর দিন। কেননা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে যোগাযোগের মাধ্যম ইংরেজি। ৬. অনলাইনে আয় করতে হলে পরিশ্রম করার মানসিকতা রাখুন। ৬. ধৈর্য ধরে চেষ্টা চালিয়ে যান। ৮. যে ওয়েবসাইটে কাজ করবেন সে ওয়েবসাইটের বিস্তারিত খুঁটিনাটি জেনে নিন। ৯. ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটে সময় না কাটিয়ে সামাজিক যোগাযোগের দক্ষতা আয়ের জন্য কাজে লাগান। ১০. নিজ দায়িত্ব বুঝে, অনলাইনে কাজ করুন। নিম্নমানের কাজ করবেন না। কারণ অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বাংলাদেশের অনেক ফ্রিল্যান্সার কাজ করেন। আপনার কারণে দেশের অন্য নতুন ফ্রিল্যান্সারদের সম্পর্কেও নেতিবাচক ধারণা হতে পারে। অনলাইন লেনদেনে সতর্ক থাকুক। দক্ষ হয়েই কাজে আসুস। পারিবারিক বাধা আসলে তাঁদের সঠিকভাবে বোঝান। আপনার কাজে সবার সহযোগিতা নিন। প্রিয় পাঠক, এমরাজিনা ইসলামের সাক্ষাৎকারটি আপনাদের কেমন লাগলো? জানাতে ভুলবেন না। লেখাটি শেয়ার করে বন্ধুদের মাঝেও ছড়িয়ে দিন, সবাইকে উৎসাহিত করুন।

No comments