নকিয়ার এ টু জেড
nokiaপ্রায় ১৫০ বছরের বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস রয়েছে নকিয়ার রয়েছে। একসময় বাজারের ৭০% সেলফোন বাজার ছিল নকিয়ার দখলে। শেষপর্যন্ত সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফটের কাছে ৫৪৪ কোটি ইউরোয় বিক্রি হয়ে গেল ফিনল্যান্ডের বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান নকিয়ার সেলফোন ব্যবসা।
চলুন জেনে নিই নকিয়ার পথচলার পরিক্রমাঃ
১৮৭১: দক্ষিণ ফিনল্যান্ডে কাগজের মিল প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে যাত্রা করে ফ্রেডরিক আইডস্ট্যাম। পরে রাবার, বৈদ্যুতিক তার ও ইলেকট্রনিক যন্ত্রাংশ নির্মাণ শুরু করে। পরবর্তী সময়ে অধিগ্রহণ করে একাধিক প্রতিষ্ঠান।
১৯৬৩: সামরিক বাহিনীর জন্য বেতার যন্ত্র নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো টেলিকম খাতে প্রবেশ।
১৯৮২: মোবিরা সিনেটর নামে গাড়িতে প্রথমবারের মতো ফোনের প্রচলন শুরু।
১৯৮৭: প্রথমবারের মতো সেলফোন আনে। মোবিরা সিটিম্যান নামে ফোনটির ওজন ছিল ১ দশমিক ৭ পাউন্ড। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ ফোনটি ব্যবহার করতেন। তাই হ্যান্ডসেটটির আরেক নাম হয় গর্বা।
১৯৯২: সেলফোন ও টেলিকম নেটওয়ার্কের অবকাঠামো নির্মাণে আরো বেশি মনোযোগী হয়। জিএসএম নেটওয়ার্কের জন্য প্রথম ডিজিটাল হ্যান্ডসেট বানায় নকিয়া।
১৯৯৪: নকিয়া ২১১০ মডেলের ফোন উন্মোচন করে। নকিয়া রিংটোনটি এতেই প্রথমবারের মতো ব্যবহার হয়।
১৯৯৮: বিশ্বের সেরা সেলফোন নির্মাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়। টানা পরবর্তী ১৪ বছর এ কর্তৃত্ব বহাল রাখে।
১৯৯৯: ৩২১০ মডেলের ফোন বাজারে আনে। নকিয়ার ইতিহাসে অন্যতম সফল ও জনপ্রিয় ফোন এটি। ১৬ কোটি ইউনিট বিক্রি হয়।
২০০০: এ বছর বাজারে আসে নকিয়া ৩৩১০। এটিও পায় আকাশচুম্বী সফলতা। এখনো মডেলটির কথা মনে রেখেছেন অনেকে।
২০০২: নকিয়ার প্রথম থ্রিজি ফোন হিসেবে বাজারে আসে ৬৬৫০। ফোন থেকেই ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সুযোগ পান ব্যবহারকারীরা।
২০০৩: আরেক জনপ্রিয় হ্যান্ডসেট ১১০০ বাজারে আসে। বিক্রি হয় ২০ কোটিরও বেশি ইউনিট। বিশ্বের তথা নকিয়ার সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া ইলেকট্রনিক ডিভাইস।
২০০৫: এন-সিরিজের স্মার্টফোন বিপণন শুরু করে। এতে ছবি তোলা, গেমিং, ইন্টারনেট ব্রাউজিং ও গান শোনার সুযোগ পান ব্যবহারকারীরা। এ সিরিজের প্রথম তিনটি ফোন এন৭০, এন৯০ ও এন৯১। এ বছরই শতকোটি ইউনিট ফোন বিক্রির রেকর্ড গড়ে নকিয়া।
২০০৬: অলি-পেক্কা কালাসভুয়ো নকিয়ার প্রেসিডেন্ট ও সিইও হিসেবে দায়িত্ব পান।
২০০৭: বিশ্বের পঞ্চম মূল্যবান কোম্পানির খেতাব পায়। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাপল স্মার্টফোনের বাজারে প্রবেশ করে।
২০০৯: এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথমবারের মতো কোনো এক প্রান্তিকে লোকসান গোনে। এর কিছু দিন আগে গুগলের মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম অ্যান্ড্রয়েডচালিত প্রথম স্মার্টফোন এইচটিসির ড্রিম বাজারে আসে। এখন অ্যান্ড্রয়েডচালিত ডিভাইসের বাজার দখল প্রায় ৬০ শতাংশ।
২০১০: অ্যাপলের আইফোন ও অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসের কাছে বাজার হারাতে থাকে। সিইও হিসেবে যোগ দেন মাইক্রোসফটের নির্বাহী স্টিফেন ইলোপ। স্মার্টফোন উত্পাদন কার্যক্রম আরো সুগঠিত করতে তিনি এক হাজার ৮০০ কর্মী ছাঁটাই করেন।
২০১১: মাইক্রোসফটের সঙ্গে অংশীদারিত্বে কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। নকিয়ার স্মার্টফোনে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম সিম্বিয়ানকে বাদ দিয়ে মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ ফোন ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়। লুমিয়া ৮০০ নামে নকিয়ার প্রথম উইন্ডোজ ফোন বাজারে আসে।
২০১২: নকিয়া সেরা নির্মাতার মুকুটটি হারায় দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাংয়ের কাছে। আরো ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করে। মুনাফা কমতে থাকে। লুমিয়া সিরিজের সেরা ফোন ৯২০ বাজারে আনে। ফিনল্যান্ডের এস্পোয় সদর দফতরটি বিক্রি করে দেয়। এর আগে ১৬ বছর এস্পোতেই ছিল নকিয়ার সদর দফতর।
২০১৩: ফিনল্যান্ড থেকেই ৩০০ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। নকিয়া সেলফোন ব্যবসা বিক্রি করে দেয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়। আগামী বছরের প্রথম ভাগে এ অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। নকিয়ার সিইও স্টিফেন ইলোপ আবারো মাইক্রোসফটে যোগ দেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। (সংগৃহীত)
Post a Comment