odhikar
posted an hour ago by hasan ali
‘অধিকার’ এবং মিথ্যাচারের রাজনীতি
মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’-এর প্রধান আদিলুর রহমান খানকে সরকার সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, শাপলা চত্বরে সরকারি বাহিনীর হাতে শাহাদতপ্রাপ্ত হেফাজতে ইসলামের কর্মীদের বিষয়ে সংস্থাটি নাকি মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। ‘অধিকার’ বলেছিল, তাদের হাতে ৬১ জন শহীদের নাম-ধাম আছে। আওয়ামী লীগ সরকার বলছে, ‘অধিকার’ বিকৃত তথ্য দিয়েছে এবং সেটি বাংলাদেশের ‘তথ্যপ্রযুক্তি আইন ২০০৬’ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই আইন মোতাবেক ভুল তথ্য প্রচারের শাস্তি আগে ১০ বছর জেলের বিধান ছিল। কিন্তু সরকার সেটি সম্প্রতি বাড়িয়ে ন্যূনতম শাস্তি ৭ বছর এবং সর্বোচ্চ শাস্তি ১৪ বছর করেছে। ফলে এ অপরাধে আদিলুর রহমানকে এবার শেখ হাসিনার সরকার আদালতে শাস্তির ব্যবস্থা করবে।
কথা হলো, মিথ্যা তথ্য দেয়া যদি বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়, তবে সে অপরাধে শাস্তি হওয়া উচিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। কারণ, তিনি বলেছেন, শাপলা চত্বরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও ৫ মে কোনো গোলাগুলি হয়নি, কেউ নিহত হয়নি এবং হেফাজত কর্মীদের গায়ে রং মেখে মৃতের অভিনয় বলার তথ্যটি। বাংলার সমগ্র ইতিহাসে এত বড় মিথ্যা কথা কেউ কি কখনও বলেছে? মিথ্যা উচ্চারণ সবসময়ই পাপ, সবসময়ই সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মজলুমের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলা যেমন অপরাধ, তেমনি অপরাধ হলো জালেমের বিরুদ্ধে মিথ্যা বলাও। আর সবচেয়ে বড় শাস্তি তো তার প্রাপ্য যে সবচেয়ে বড় মিথ্যাটি বলে।
মিথ্যাচারীদের আরেক অপরাধ, জনগণকে তারা বিবেকহীন করে। সেটি জনগণের মনে মিথ্যার আবাদ বাড়িয়ে দেয়ে। আগাছার আবাদ বৃদ্ধিতে জমির উর্বরতা যেমন বিলুপ্ত হয়, তেমনি মিথ্যার প্রকোপে অসম্ভব হয় মানব মনে সত্যের বীজ বেড়ে ওঠার। এমন মিথ্যুকদের আল্লাহ তায়ালা হেদায়েত দেন না। মিথ্যাচারীরা তাই বঞ্চিত হয় ইসলামের বরকত থেকে। বিবেকহীন ও দুর্বৃত্ত হওয়াটাই তাদের রীতি। তাই সত্যকে কবুল করার ক্ষেত্রে তারা সামর্থ্যহীন হয়। এ কারণেই ঈমানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে নাশকতাটি ঘটায় মিথ্যাচারিতা। শয়তানের এটিই সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। শুধু ফেরাউন বা নমরুদ নয়, সাপ-শকুন, গরু-ছাগল ও মূর্তিরাও কোটি কোটি মানুষের কাছে ভগবানরূপে গণ্য হয়েছে তো এরূপ মিথ্যাচারীদের প্রচারের কারণে। একইভাবে শেখ মুজিব ও তার দল আওয়ামী লীগও কোটি কোটি মানুষকে বিবেকহীন করেছে। আওয়ামী বড় অপরাধটি তাই শুধু ভারতের দাসত্ব প্রতিষ্ঠা নয়, স্বৈরাচারী শাসনও নয়। বরং সেটি মিথ্যার প্রতিষ্ঠা। দেশে তিরিশ লাখের মিথ্যা তথ্যটির প্রচার তো সে কারণে এতটা বলবান।
এ ধরনের ভয়ঙ্কর মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগে কাঠগড়ায় তোলা উচিত শেখ হাসিনাকে। সে মিথ্যা তথ্যটি তিনি দিয়েছেন ১৯ জুন সংসদে দাঁড়িয়ে। আজ এটি প্রমাণিত সত্য যে, ৫ মে রাতে হেফাজতে ইসলামের লক্ষাধিক নেতাকর্মীকে শাপলা চত্বর থেকে সরানোর সময়ে নৃশংস গোলাগুলি হয়েছিল। তাতে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছিল এবং রক্তের স্রোতে ভেসে গিয়েছিল মতিঝিলের রাজপথ। সে নৃশংসতার অসংখ্য ভিডিওচিত্র আজ দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে। কিন্তু শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সেই (৫ মে) দিন কোনো গোলাগুলি বা সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা সেখানে গায়ে লাল রঙ মেখে পড়ে ছিল। পরে পুলিশ যখন তাদের ধরে টান দেয়, দেখা গেল উঠে দৌড়াচ্ছে। দেখা গেল লাশ দৌড় মারল।’ (দৈনিক আমার দেশ ২০/০৬/১৩)। ৫ মে’র রাতের নৃশংসতা নিয়ে এ অবধি সরকারি দল, র্যাব, পুলিশ ও বিজিবীর পক্ষ থেকে বহু ব্যক্তি বহু মিথ্যা ভাষণ রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, হাসিনা যে মিথ্যাচার করলেন, এত বড় মিথ্যা কথা কি আজ অবধি কেউ বলেছে?
সেই কালো রাতে যে নৃশংস বর্বরতাটি ঘটেছে তার ভুক্তভোগী ও সাক্ষী শুধু হেফাজতে ইসলামের লক্ষাধিক নেতাকর্মীই নন, বরং প্রত্যক্ষদর্শী হলো শত শত মিডিয়া কর্মী ও সাধারণ মানুষ। তাছাড়া এ নৃশংসতার শত শত ভিডিওচিত্রও রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী তা ছড়িয়ে পড়েছে। কোনো সজ্ঞান ও সুস্থ মানুষ কি সে সচিত্র প্রমাণগুলো অস্বীকার করতে পারে? একাত্তরের ২৫ মার্চের ঘটনা নিয়ে লাগামহীন গুজব সৃষ্টি করা চলে, কারণ তার কোনো ভিডিও প্রমাণ নেই। কিন্তু সে অবকাশ ৫ মে’র ঘটনা নিয়ে নেই। অথচ শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সে রাতের বর্বরতার ধারণকৃত ভিডিও চিত্রগুলো অস্বীকার করে চলছেন। শেখ হাসিনার এরূপ বিষোদগার কি কেবল মিথ্যাচার? বরং নিহত ও আহত হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষের সঙ্গে এক নিষ্ঠুর বিদ্রূপও। একমাত্র মানসিকভাবে অসুস্থ মানুষই এমন মিথ্যচারী ও বিদ্রূপকারী হতে পারে। শুধু তাই নয়, শেখ হাসিনা উল্টো মিথ্যাচারিতার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। মিথ্যাচারী ও অপরাধী প্রমাণের চেষ্টা করেছেন হেফাজতে ইসলামের ধর্মপ্রাণ নেতাকর্মীদের। তাদের চরিত্র হনন করতে গিয়ে তিনি ধর্মের দোহাইও দিয়েছেন। মিথ্যা কথা বলা মহাপাপ ও ধর্মবিরোধী—উলামাদের প্রতি সে নসিহতও করেছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অথচ তারা (বিরোধী দল) ১ লাখ ২ হাজার গুলি, হাজার হাজার লাশের কথা বলে বেড়াচ্ছে। এ ধরনের আজেবাজে মিথ্যাচার করে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। ধর্মের নামে এই অসত্য কথা বলে কোন ধরনের ইসলাম পালন তা আমি জানি না।’ (দৈনিক আমার দেশ, ২০/০৬/১৩)।
প্রধানমন্ত্রী যে শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ড নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন সেটি সরকারি প্রেসনোটও প্রমাণ করেছে। হতাহতের প্রকৃত সংখ্যাটি প্রেসনোটে গোপন করার চেষ্টা করা হলেও প্রেসনোট এতটুকু বলতে বাধ্য হয়েছে যে, সেখানে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে এবং বলেছে, ওইদিন ১১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং লাশ দেখা গেছে শাপলা চত্বরের মঞ্চের পাশে। ফলে প্রেসনোটেই প্রমাণিত হয়েছে হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। হাসিনার দেয়া ভাষ্য মতে, ‘সেই (৫ মে) দিন কোনো গোলাগুলি বা সেরকম কোনো ঘটনাই ঘটেনি। তারা সেখানে গায়ে লাল রং মেখে পড়ে ছিল। পরে পুলিশ যখন তাদের ধরে টান দেয়, দেখা গেল উঠে দৌড়াচ্ছে। দেখা গেল লাশ দৌড় মারল’—এ তথ্যটি ডাহা মিথ্যা ও বানোয়াট। বরং প্রকৃত সত্য হলো, সেদিন প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়েছিল। গোলাগুলিতে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হয়েছে। শহীদ হওয়া ব্যক্তিদের লাশগুলো সেদিন হাসিনার কথামত দৌড় মারেনি, বরং সেখানেই রক্তাত্ব নিথর দেহ নিয়ে পড়ে ছিল। সরকারি প্রেসনোটদাতারাও সে লাশগুলো দেখেছে। অনেক দেখেছেন সে লাশগুলোকে ময়লার গাড়িতে তুলতে। অতএব এরূপ উদ্ভট মিথ্যা তথ্য দেয়ার জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তির আইনে বিচার ও সে বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়া উচিত।
হামলা ৭ হাজার ৫৮৮ জন সৈনিকের
শেখ হাসিনা যে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন সে প্রমাণ শুধু হেফাজতকর্মীরা দেয়নি। দিয়েছেন বহু সাংবাদিকও। ১২ মে দৈনিক যুগান্তর রিপোর্ট করে, পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির ৭ হাজার ৫৮৮ জন এ হামলায় অংশ নিয়েছিল। হামলাকারীদের মধ্যে ১৩০০ জন এসেছিল র্যাব থেকে। ৫,৭১২ জন এসেছিল পুলিশ বাহিনী থেকে এবং ৫৭৬ জন এসেছিল বিজিবি থেকে। তখন শাপলা চত্বরের আশপাশে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে বসে ছিলেন লক্ষাধিক মুসল্লি। যাদের অনেকে সে সময় তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছিলেন, কেউ বা জিকির করছিলেন, কেউ বা সারাদিন সরকারি গুণ্ডা বাহিনীর হামলা মোকাবিলা করে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন। হামলা শুরু হয় রাত আড়াইটার সময় এবং তিন দিক দিয়ে। দৈনিক যুগান্তর লিখেছে, সমগ্র এলাকাটি সে সময় বন্দুকের গুলি, টিয়ার গ্যাসের শেল ও ধোঁয়াতে পূর্ণ হয়ে যায়। পত্রিকাটি বিবরণ দিয়েছে, হামলাকারী এ বিশাল বাহিনীর নেতৃত্ব দেন র্যাবের ইন্টেলিজেন্স প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল হাসান, র্যাব-১০ এর কমান্ডার লে. কর্নেল ইমরান, র্যাব-৩ এর কমান্ডার মেজর শাব্বির এবং র্যাব ডাইরেক্টর লে. কর্নেল কিসমত হায়াত, র্যাব ডাইরেক্টর কামরুল আহসান এবং বিজিবি অফিসার কর্নেল ইয়াহিয়া আযম।। সিপাহিদের পাশে হামলাতে অংশ নেয় ৫ জন কমান্ডো অফিসার। শত্রু দেশের বিরুদ্ধে পরিচালিত কোনো প্রকাণ্ড সীমান্ত যুদ্ধের যেমন কোড নাম থাকে, তেমনি কোড নাম ছিল জনগণের বিরুদ্ধে পরিচালিত এ সেনাযুদ্ধেরও। তবে একটি নয়, একাধিক। র্যাব এ যুদ্ধের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন ফ্লাশআউট’, আর বিজিবি নাম দিয়েছিল ‘ক্যাপচার শাপলা’।
একাত্তরের ৯ মাসের যুদ্ধে ভারত ও পাকিস্তানের কোনো পক্ষই সীমান্ত যুদ্ধের কোনো একটি একক সেক্টরে ৭ হাজার ৫৮৮ জন সৈন্য নিয়ে হামলা করেনি। অথচ এক শাপলা চত্বরের মতো আধা মাইলের কম জায়গায় সৈন্য নামানো হয়েছিল ৭ হাজার ৫৮৮ জন। বাংলাদেশের বিগত হাজার বছরের ইতিহাসে এত বড় হামলা এবং এক রাতে এত মৃত্যু কোনো কালেই হয়নি। ইখতিয়ার উদ্দিন মহম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির হাতে যখন আজকের বাংলাদেশের চেয়ে বৃহত্তর বাংলা বিজিত হয়, তখনও এত বড় হামলা এবং এত মৃত্যু হয়নি। সে হামলাটি হয়েছিল মাত্র ১৭ জন সৈনিক নিয়ে। প্রশ্ন হলো, হাসিনার কথামত শাপলা চত্বরে যদি কোনো কিছু না হয়ে থাকে তবে কেন এত সৈন্য, এত পুলিশ, এত র্যাব ও এত অফিসার সেখানে হাজির হয়েছিল? তবে কি তারা শাপলা চত্বরে ঘোড়ার ঘাস কাটতে জমা হয়েছিল?
গত ২৯ আগস্ট চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির জনসভায় শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। আমি শুধু আপনাদের জন্য কাজ করি। আমার বাবা এ দেশের দুঃখী মানুষের জন্য সারা জীবন কাজ করেছেন।’ এটি কি কম মিথ্যাচার? অথচ হাসিনা চান নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। চান লুটপাটের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। তার পিতাও চাইতেন নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। নিছক ক্ষমতা লাভের স্বার্থেই তিনি একাত্তরে ভয়ানক যুদ্ধ ডেকে এনেছিলেন। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও দেশবাসীর কল্যাণ—এসব মুজিবের কাছে কোনো কালেই বিবেচনার বিষয় ছিল না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আজীবন নিজ হাতে রাখার স্বার্থেই তার পিতা শেখ মুজিব গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন জনগণের মুখ থেকে। গড়ে তুলেছিলেন নিজের সাঙ্গপাঙ্গদের দুর্নীতির রাজত্ব। সে দুর্নীতির কারণেই তার শাসনামলে নেমে এসেছিল ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ। কয়েক লাখ দুঃখী মানুষকে তিনি মৃত্যুর হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সৃষ্টি হয়েছিল অসংখ্য জাল পড়া বাসন্তি। বাংলাদেশের গরিব মানুষদের জন্য এই ছিল মুজিবের দান। শেখ হাসিনাও চান তার পিতার মতো নিরঙ্কুশ প্রশাসনিক ক্ষমতা। চান লুটপাটের নিরঙ্কুশ অধিকার। সে ক্ষমতা লাভের স্বার্থে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথাকে বিলুপ্ত করে নির্বাচন পরিচালনার দায়-দায়িত্ব নিজ হাতে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। অথচ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুটি ছিল বহু আন্দোলনের পর একটি মীমাংসিত বিষয়। সে ইস্যুকে আবার বিতর্কিত করে দেশকে তিনি এক রক্তক্ষয়ী সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। এমন একটি আন্দোলনে জনগণের জানমালের কোরবানির সঙ্গে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি কি কম। তিনি নিজে জানেন বাংলাদেশের মতো দেশে নির্বাচন পরিচালনার ক্ষমতা কোনো দলীয় সরকারের হাতে থাকলে সে দলকে নির্বাচনে পরাজিত করা দুরূহ। সে কারণেই নির্বাচনে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি এমনকি স্বৈরাচারী এরশাদের মতো জনপ্রিয়তাহীন এক চিহ্নিত দুর্বৃত্তকেও। শেখ হাসিনা নিজেও সেটি বুঝতেন। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে তিনি নিজেও আন্দোলন করেছিলেন। অথচ আজ নিজের বিজয় সুনিশ্চিত করার স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথাকে তিনি বিলুপ্ত করলেন এবং নির্বাচন অনুষ্ঠানের কর্তৃত্ব নিজ হাতে নিলেন। বিরোধী দল কি এতই বোকা যে তার এ কূটকৌশল তারা বোঝে না? তিনি নিজে যখন দলীয় সরকারকে অতীতে মেনে নেননি, অন্যরাই-বা কেন মেনে নেবে? লুটের লোভ তার মাঝে এতই অধিক যে, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর বিদায়পর্বে তিনি প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত বাসভবনকে নিজ নামে লিখে নেয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। অথচ আজ বলছেন তিনি পাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন না। এসব মিথ্যাচারিতা নিয়েও তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হওয়া উচিত।
শাস্তি হোক সব মিথ্যাচারীর
মিথ্যাই সব পাপের মূল। মিথ্যা পরিত্যাগ করলে অন্য সব পাপ পরিত্যাগ করাও তখন সহজ হয়ে যায়। নবীজী (সা.) এটিকে সব পাপের মা বলে আখ্যায়িত করেছেন। পাপ ও দুর্বৃত্তির জন্ম হয় মিথ্যার গর্ভ থেকেই। মিথ্যাচারীদের কারণেই সত্যবাদী সত্ লোকদের রাজনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও ধর্মকর্ম কঠিন হয়ে পড়ে। তখন পরাজিত হয় আল্লাহর শরিয়তি বিধান। মিথ্যাবাদীদের লড়াই তো শয়তানের রাজনীতির বিজয় আনার। শয়তান তো তাদের ঘাড়েই সওয়ার হয়ে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজ পরিচালনা করে। মুজিব ও হাসিনার রাজনীতির প্রতি দেশি-বিদেশি কাফেরদের এজন্যই তো এত সমর্থন। অথচ নবীজী (সা.)-এর জীবনে লাগাতার জিহাদটি ছিল আল্লাহর জমিনকে মিথ্যাচারীদের দখলদারি থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে। রাজনীতি, সংস্কৃতি, প্রশাসন ও বিচার-আচারের ওপর মিথ্যাচারীদের যে দেশে যত বেশি দখলদারি, সে দেশ দুর্বৃত্তিতে ততই বিশ্বরেকর্ড গড়ে। বাংলাদেশ যে দুর্বৃত্তিতে বিশ্বে ৫ বার প্রথম হওয়ার রেকর্ড গড়েছে সেটি দেশের ভূপ্রকৃতি বা জলবায়ুর কারণে নয়, বরং দেশের রাজনীতি, প্রশাসন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আইন-অদালত মিথ্যাচারীদের হাতে অধিকৃত হওয়ায়। তাই দুর্বৃত্তি ও অপরাধ দমনের স্বার্থে প্রতিটি সভ্য দেশেই মিথ্যাকথন শাস্তিযোগ্য অপরাধরূপে গণ্য হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আজ অবধি কাউকে কি শুধু মিথ্যা বলার জন্য আদালতে তোলা হয়েছে? কারও কি একদিনের জন্যও জেল হয়েছে? কোনো মন্ত্রী বা এমপি কি তাদের চাকরি বা পদমর্যাদা হারিয়েছে? বরং ঘটেছে উল্টোটি। বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচারীকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিরূপে প্রতিষ্ঠা দেয়া হচ্ছে। এভাবে কি দেশ থেকে মিথ্যার নির্মূল হয়? নির্মূল হয় কি দুর্বৃত্তি?
আদিলুর রহমান খানকে হাজতে তোলা হয়েছে এজন্য নয় যে, তিনি মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। বরং এ জন্য যে, ‘অধিকার’-এর দেয়া তথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, সরকার ভয়ানক মিথ্যাচারী। এতে ক্রোধ গিয়ে পড়েছে আদিলুর রহমানের ওপর। আদিলুর রহমান খান যদি সরকারের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বলতেন, শাপলা চত্বরে কোনোরূপ গুলি চলেনি এবং সেখানে কেউ মারাও যায়নি তবে তাকে যে পুরস্কৃত করা হতো তা নিয়ে কি সন্দেহ আছে? বাংলাদেশে এরূপ মিথ্যাচারীদের বিচরণ শুধু দেশের রাজনীতি, প্রশাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নয়, বরং সেটি দেশের অন্য সব খানেও। দেশের কল্যাণ তাই শুধু চোর-ডাকাত ও খুনি-লম্পটদের শাস্তি দেয়াতে নয়, বরং এসব মিথ্যাচারীকে শাস্তি দেয়াতেও। বাংলাদেশে সে কাজটি যত দ্রুত শুরু হয় ততই দেশের মঙ্গল এবং সেটির শুরু হওয়া উচিত আওয়ামী লীগ সরকারকে আদালতের কাঠগড়ায় খাড়া করার মধ্য দিয়ে। তাতে অন্যরাও তখন উচিত শিক্ষা পেত। মিথ্যা বলাও যে শাস্তিযোগ্য ফৌজদারি অপরাধ, সেটি সাধারণ মানুষও তখন বুঝতে পারত।
Post a Comment